সন্তান প্রসবের পর মা ও শিশুর শরীর দূর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। এ সময় সঠিক যত্ন নিলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এসব জটিলতা এড়ানো সম্ভব। প্রসবের পর সঠিক যত্ন নিলে মায়ের শরীর যেমন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয় তেমনি শিশু সুস্থ থাকে ও সবল হয়ে উঠে।
প্রসব পরবর্তী সেবা
প্রসবের পর পরই মায়ের এবং নবজাত শিশুর যত্ন নেয়া এবং প্রসবের পর ৬ সপ্তাহ (৪২ দিন) পর্যন্ত মা ও শিশুর অবস্থা ফলোআপ করাকে প্রসব পরবর্তী সেবা বলা হয়।
প্রসবের পর করণীয়
মায়ের ক্ষেত্রে
- গর্ভধারণে শরীরের যে ক্ষয় হয় তা পূরণের জন্য প্রসবের পর মাকে বেশী করে খাবার খেতে হবে। শিশুর প্রয়োজনে বুকের দুধ তৈরীর জন্য এ সময় মায়ের সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
- মাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
- মাকে নিয়মিত গোসল ও পরিষ্কার কাপড় পরাতে হবে।
- এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রসূতি মাকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসূল ও আয়রণ বড়ি খেতে হবে।
- প্রসবের পর দম্পত্তিকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
- পরিবারের সকল সদস্যকে প্রসব পরবর্তী মায়ের সেবা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
শিশুর ক্ষেত্রে
- প্রসবের পর মাটিতে না রেখে শিশুকে হাতে তুলে নিতে হবে।
- শিশুর মুখের ভিতর, মুখমন্ডল ও সমস্ত শরীর পরিস্কার কাপড় দিয়ে জড়িয়ে নিতে হবে।
- জন্মের পরপরই গর্ভফুল পড়ার অপেক্ষা না করে শিশুকে শালদুধ সহ মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। জন্মের সাথে সাথে শিশু স্তন চোষা শুরু করলে মায়ের দুধ ঠিকমত আসবে। এছাড়া প্রসবের সাথে সাথে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে মায়ের ফুল পড়তে এবং রক্তস্রাব দ্রুত বন্ধ হতে সাহায্য করবে।
- নবজাত শিশুকে সরিষার তেল, মধু বা চিনির সরবত জাতীয় অন্য কোন পানীয় খেতে দেয়া উচিৎ নয়।
- নাড়ী কাটার জন্য প্রথমে নবজাতকের পেট থেকে যথাক্রমে দুই আঙ্গুল, আধ আঙ্গুল ও এক আঙ্গুল ব্যবধানে জীবাণুমুক্ত সূতা দিয়ে পরপর তিনটি বাঁধন দিতে হবে। এরপর পরিস্কার জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বাঁধনের মাঝ বরাবর কেটে দিতে হবে।
- শিশুর জন্মের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার ওজন নিতে হবে।
- জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে বিসিজি এবং এবং ইপিআই এর ৮টি রোগের টিকা দিতে হবে।
প্রসব পরবর্তী বিপদ বা খারাপ লক্ষণ
- ডেলিভারীর পরপর রক্ত পড়া যেটা কমার পরিবর্তে বাড়ে অথবা বড় কোন রক্তের টুকরা যাওয়া
- যোনীপথে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা তরল বের হওয়া
- খিঁচুনী বা অজ্ঞান হওয়া
- তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া
- স্তনে ব্যথা, ফোলা অথবা লাল হয়ে যাওয়া
চিকিৎসা বা সহায়তা প্রাপ্তির স্থানসমূহ
- পরিবার কল্যাণ সহকারি
- ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র
- জেলা হাসপাতাল
- সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল